আজ ভোটযুদ্ধ

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১২:৪১

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে



শাহেদ মিজান, সিবিএন:


বাংলাদেশের জনগণের বহু আকাঙ্খার একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আজ ৩০ ডিসেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৮টায় সারা দেশে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট মুখোমুখি হয়েছে। তবে প্রধান দল হিসেবে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়েই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। জামায়াত ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় বৃহৎ দল হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন বরাদ্দ পেয়েছেন। বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত আজকের নির্বাচনে কোন দল ক্ষমদায় যাচ্ছেন তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে তার অপেক্ষার প্রহর প্রায়ই শেষ হয়ে এসেছে। ভোট গণনার পরই নির্ধারণ হবে আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশকে কারা চালাবেন!

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে, আজকের ভোটযুদ্ধে কক্সবাজারের আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৮জন প্রার্থী। তবে মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের নয় প্রার্থী। তারা হলেন- কক্সবাজার-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দীন আহমদের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ এবং চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তিন প্রার্থী। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কারাবন্দী হামিদুর রহমান আযাদ ও ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর ফরিদ। কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল। কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। তারা হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আকতার ও সাবেক চারবারের সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। এই নয় প্রার্থীর মধ্যে চারজনই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে শেষ হাসি হাসবেন চার ভাগ্যবান!

ভোট গ্রহণে নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, আমর্ড পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। তবে সেনাবাহিনীর প্রতিই ভোটারদের আস্থা রয়েছে। কক্সবাজারের চার আসনে ৪টি পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নের ৫১২ ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ২০৪ জন। এরমধ্যে ৭ লাখ ৭ হাজার ৮৩১ জন পুরুষ এবং ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৩ জন মহিলা।

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষাবে ভোটগ্রহণের জন্য জেলার চার আসনই নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে। এর জন্য দায়িত্ব পালন করবেন ৩০ প্লাটুন সেনাবাহিনী, ৬ প্লাটুন নৌবাহিনী, ৪৮ প্লাটুন বিজিবি, ১০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশ ও ২ কোম্পানি র‌্যাব। তবে র‌্যাব এর এই ২ কোম্পানি কক্সবাজার জেলা ছাড়াও চট্টগ্রামের দুইটি আসনের দায়িত্বে থাকবেন। তাদের নেতৃত্ব দেবেন ৮৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও আনাসার ও গ্রাম পুলিশ শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে।

অন্যদিকে মাঠের হিসাবে চার আসইে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস রয়েছে। কক্সবাজার-১ আসনটি শুরু থেকে নানা উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে জেলায় বেশ আলোচনায় রয়েছে। শুরুতে দু’প্রার্থী মাঠে নামলেও মাঝপথে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বাধার মুখে বিএনপি প্রার্থী হাসিনা আহমদ শেষ পর্যন্ত প্রচারণা চালাতে পারেননি বলে অভিযোগ তাঁর। তবে এরমধ্যে দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি পাল্টাপাল্টি হামলা ঘটনার ঘটে গেছে। তবুও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হলে এই আসনে তুমুল লড়াই হওয়ার আভাস রয়েছে।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে শুরুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন- আশেক উল্লাহ রফিক, হামিদুর রহমান আযাদ ও ড. আনসারুল করিম। প্রথমে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কাগজপত্র জমা দিতে না পারায় আলমগীর ফরিদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল। পরে তিনি দীর্ঘ আইনী লড়াই করে ধানের শীষের প্রতীকসহ প্রার্থীতা ফিরে পান। কিন্তু তিনি মাঠে নামার দু’দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সরে দাঁড়িয়ে আশেক উল্লাহর রফিকের জন্য মাঠে নেমেছেন ড. আনসারুল করিম। শেষ মুহূর্তে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিন প্রার্থীই শক্তিমান হওয়ায় এই আসনে ভোটে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার আভাস রয়েছে।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে মাত্র এই দু’প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকায় প্রচারণার যুদ্ধ বেশ জমজমাট ছিলো। তবে লুৎফুর রহমান কাজলের প্রচারণায় শুরু থেকে বাধা দেয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এই কারণে দু’পক্ষের মধ্যে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। দু’প্রার্থীই জাদরেল হওয়ায় এই আসনেও তুমুল ভোটযুদ্ধ হওয়ার আভাস রয়েছে।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে ভোটের হিসাবে দু’প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস রয়েছে। তবে প্রচারণায় অনেক পিছিয়ে ছিলেন শাহজাহান চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, আবদুর রহমান বদি ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে তাঁর প্রচারণায় মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও এলাকাছাড়া করেছেন। সে কারণে তিনি প্রচারনায় পিছিয়ে ছিলেন। তবে ভোটের যুদ্ধে ঠিকই দু’প্রার্থী মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার আভাস রয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, কক্সবাজারের চার আসনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে ভোট সম্পন্ন করার জন্য বিপুল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। কেউ ভোটগ্রহণকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।